সহজ শর্তে ঋণ পুনঃতফসিল: সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা: ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য নীতির সহায়তা

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানসমূহকে তাদের ব্যবসা ও আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের মাধ্যমে সচল ও লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিশেষ নীতি সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (BRPD) কর্তৃক ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে জারি করা BRPD সার্কুলার নং-০৭ এ এই বিস্তারিত প্রক্রিয়া বর্ণিত হয়েছে।

কেন এই নীতি সহায়তা?

সাম্প্রতিক সময়ে, আগস্ট ২০২৪ এর পট পরিবর্তনের পূর্ববর্তী সময়ে, দেশের অনেক ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণ এবং অবাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হয়ে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন। এর ফলে, তারা ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন এবং তাদের ঋণ হিসাবগুলো বিরূপভাবে শ্রেণিকৃত হয়েছে। এতে ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যা সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাতের আর্থিক কাঠামোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

এই প্রেক্ষাপটে, ব্যাংকিং খাতে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরিয়ে আনা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

নীতি সহায়তা পাওয়ার যোগ্যতা

এই সার্কুলারের আওতায় নীতি সহায়তা কেবল সেই বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া যাবে, যারা আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম বলে প্রতীয়মান হয়।

কারণসমূহ:

  1. নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত ও অবাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি: যারা বিগত সময়ে ঋণ এবং ঋণ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং ও আনুষঙ্গিক সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণ এবং অবাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হয়েছেন (যেমন: দৃষ্টিভঙ্গিজাত বৈষম্য অথবা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইউটিলিটি সংযোগ/সরবরাহ না পাওয়া)। সচল রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানও এই সুবিধার যোগ্য।
  2. বৈশ্বিক ও বিনিময় হারজনিত ক্ষতি: যারা বিভিন্ন কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্নতা থেকে সৃষ্ট অভিঘাত এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার অপ্রত্যাশিত বিনিময় হারজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কারা থাকছেন তালিকার বাইরে: জালিয়াতি ও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের জন্য ‘না’

এই নীতি সহায়তার দরজা সবার জন্য খোলা নয়। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কিছু কঠোর ব্যতিক্রমও রাখা হয়েছে। সার্কুলার অনুযায়ী, দুটি শ্রেণীর ঋণগ্রহীতা এই সুবিধার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন:

• জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা বা অন্য কোনো অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ (Clause 4(P))।

• ব্যাংক কর্তৃক চূড়ান্তভাবে ঘোষিত “ইচ্ছাকৃত খেলাপি” ঋণগ্রহীতা (Clause 4(Q))।

এই বিভাজনটি ব্যাংকিং খাতে নৈতিক ঝুঁকি (moral hazard) কমানোর একটি প্রচেষ্টা, যা নিশ্চিত করে যে এই বিশেষ সুবিধাটি কেবল দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির শিকার সৎ উদ্যোক্তাদের জন্যই সংরক্ষিত থাকে।

অগ্রাধিকার ও যাচাইকরণ:

  • যেসব ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ইতোপূর্বে ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ বা পুনর্গঠনসহ কোনো নীতি সহায়তা পাননি, তারা অগ্রাধিকার পাবেন।
  • নীতি সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য ঋণ পরিশোধ সক্ষমতার বিষয়টি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাধ্যমে যাচাই করতে হবে।
  • প্রয়োজনে ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তালিকাভুক্ত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও এই বিষয়টি যাচাই করতে পারবে।

নীতি সহায়তার প্রকৃতি ও সুবিধা

প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতার অনুকূলে চার ধরনের নীতি সহায়তা প্রদান করা হবে:

১. বিশেষ পুনঃতফসিলজনিত সুবিধা (Special Rescheduling)

এই সুবিধা ৩০ জুন ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত বিরূপ মানে (SS, DF, B/L) শ্রেণিকৃত ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

সুবিধার বিবরণনির্দেশনাউদ্ধৃতি
সর্বোচ্চ মেয়াদসর্বোচ্চ ১০ (দশ) বছর
গ্রেস পিরিয়ডসর্বোচ্চ ০২ বছর গ্রেস পিরিয়ড সহ।
ডাউন-পেমেন্টবিদ্যমান ঋণ স্থিতির ন্যূনতম ২% ডাউন-পেমেন্ট নগদে গ্রহণ করতে হবে। (পূর্বে পরিশোধিত কিস্তি ডাউন-পেমেন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে না)।
অতিরিক্ত ডাউন-পেমেন্টযদি ইতোপূর্বে তিন বা ততোধিক পুনঃতফসিল করা হয়ে থাকে, তবে অতিরিক্ত ১% ডাউন-পেমেন্ট আদায় করতে হবে।
সুদ হার (Preferential Rate)সংশ্লিষ্ট খাতে প্রদেয় সর্বনিম্ন সুদ হার অপেক্ষা ১ শতাংশ কম একটি প্রেফারেন্সিয়াল সুদ হার ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা যাবে।
কিস্তি আদায়মাসিক অথবা ত্রৈমাসিক সমকিস্তিতে আদায়যোগ্য হবে. গ্রেস পিরিয়ড চলাকালীন আরোপিত সুদ সম্পূর্ণ বা আংশিক আদায় করা যেতে পারে।
শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনএই ঋণগুলো এসএমএ (SMA) মানে শ্রেণিকৃত করতে হবে এবং যথাযথ নিয়মে সাধারণ প্রভিশন (General Provision) সংরক্ষণ করতে হবে।
আয়ের খাতে স্থানান্তরস্থগিত সুদ হিসেবে রক্ষিত সুদ এবং পুনঃতফসিল পরবর্তী আরোপিত সুদ প্রকৃত আদায় ব্যতিরেকে ব্যাংকের আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। পূর্বে সংরক্ষিত নির্দিষ্ট প্রভিশন (Specific Provision) শুধুমাত্র সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণের নিমিত্তে স্থানান্তর করা যাবে।
খেলাপি হলেযদি ঋণগ্রহীতা নির্ধারিত পরিশোধসূচি মোতাবেক ০৩টি মাসিক কিস্তি অথবা ০১টি ত্রৈমাসিক কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তবে সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাব BRPD সার্কুলার নং-১৫/২০২৪ অনুযায়ী শ্রেণিকরণ করতে হবে।
নতুন ঋণ সুবিধাCompromised amount প্রদান ব্যতিরেকে নতুন ঋণ সুবিধা প্রদান বা বিদ্যমান ঋণসীমা বৃদ্ধি করা যেতে পারে, তবে ব্যাংকের গ্রাহকের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে হবে।

২. বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারজনিত ক্ষতির প্রেক্ষিতে নীতি সহায়তা (Exchange Rate Loss Support)

এই সহায়তা শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানির নিমিত্তে জানুয়ারি-ডিসেম্বর, ২০২২ পর্যন্ত সময়ে স্থাপিত এবং/অথবা নিষ্পত্তিকৃত ইউজেন্স ঋণপত্রের (Deferred L/C, UPAS L/C) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার অপ্রত্যাশিত বিনিময় হারজনিত ক্ষতির মোট পরিমাণ BRPD সার্কুলার লেটার নং-৫০/২০২৪ অনুযায়ী হিসাবায়ন করতে হবে। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা প্রদান করা যাবে।

৩. বিশেষ পুনর্গঠনজনিত সুবিধা (Special Restructuring)

৩০ জুন ২০২৫ তারিখে অশ্রেণিকৃত মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে (ইতোপূর্বে পুনঃতফসিলকৃত ঋণসহ) এই সুবিধা দেওয়া যাবে।

  • মেয়াদকাল: BRPD সার্কুলার নং-১৬/২০২২ এর ৬(১) অনুচ্ছেদে বর্ণিত মেয়াদের অতিরিক্ত সর্বোচ্চ ০২ (দুই) বছর মেয়াদ নির্ধারণ করে পুনর্গঠন করা যাবে।
  • কিস্তি: ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে মাসিক অথবা ত্রৈমাসিক সমকিস্তি নির্ধারণ করতে হবে.
  • অন্যান্য ক্ষেত্রে BRPD সার্কুলার নং-১৬/২০২২ এর নির্দেশনা অনুসরণীয় হবে.

৪. বিশেষ এক্সিটজনিত সুবিধা (Special Exit)

বিশেষ এক্সিট সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে BRPD সার্কুলার নং-১৩/২০২৪ এ বর্ণিত হারে ডাউন-পেমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।

  • সময়সীমা: ঐ সার্কুলারে বর্ণিত মেয়াদের অতিরিক্ত ০১ (এক) বছর সময় প্রদান করা যাবে।
  • সুদ: নিয়মিত ঋণকে বিশেষ এক্সিট প্রদানের ক্ষেত্রে এক্সিট চলাকালীন আরোপিত সুদ ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ বা আংশিক আদায় করা যাবে।
  • অন্যান্য ক্ষেত্রে BRPD সার্কুলার নং-১৩/২০২৪ এর নির্দেশনা অনুসরণীয় হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া ও শর্তাবলী

আবেদন সময়সীমা ও নিষ্পত্তি

  • নীতি সহায়তা পাওয়ার জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নিকট আবেদন করতে হবে।
  • ব্যাংক আবেদন গ্রহণের তারিখ হতে পরবর্তী ০৬ (ছয়) মাসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবে। (ডাউন-পেমেন্টের অর্থ ব্যাংকের অনুকূলে নগদায়নের পর থেকে এই ৬ মাস গণনা শুরু হবে)।

অনুমোদন প্রক্রিয়া

দ্রুত সিদ্ধান্তের আশ্বাস: বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই

ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন অনুমোদন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের সংকট আরও বাড়িয়ে তোলে। এই সমস্যা সমাধানে নতুন নীতিমালায় প্রক্রিয়াটিকে সহজ করা হয়েছে। সার্কুলারের 4(M) ধারা অনুযায়ী, এই সুবিধা অনুমোদনের জন্য ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নিতে হবে না। ব্যাংকের নিজস্ব পরিচালনা পর্ষদই এটি অনুমোদন করতে পারবে। তবে, সার্কুলারের 4(O) এবং 6 ধারা অনুযায়ী, ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে যদি ব্যাংক নিজে সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তবে তা একটি বিশেষ বাছাই কমিটিতে পাঠানো যাবে এবং ব্যাংক পরিচালকদের ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই অনুমোদন প্রক্রিয়া ব্যাংকগুলোকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিলেও, এর সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

  • নীতি সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে না
  • তবে, এই বিষয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ হতে অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

একাধিক ব্যাংকের ঋণ

একাধিক ব্যাংক হতে গৃহীত ঋণের ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ সর্বোচ্চ ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক অথবা সকলের সম্মতিতে যেকোনো ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক (Lead Bank) গ্রহণ করবে। অন্যান্য ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকসমূহ Lead Bank-কে যৌক্তিক ও অর্থপূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করবে।

বৃহৎ ঋণের ক্ষেত্রে বিশেষ কমিটি

৩০০ (তিনশত) কোটি টাকা বা তদূর্ধ্ব ঋণ স্থিতিসম্পন্ন ঋণগ্রহীতাকে নীতি সহায়তা প্রদানের বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব না হলে, ‘ব্যবসা ও আর্থিক ব্যবস্থাদি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গঠিত নীতি সহায়তা সংক্রান্ত বাছাই কমিটি’ বরাবর আবেদন প্রেরণ করতে হবে।

অযোগ্যতা

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রদান করা যাবে না:

  1. জাল-জালিয়াতি বা অন্য কোনো ধরনের প্রতারণা/অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ।
  2. ব্যাংক কর্তৃক চূড়ান্তভাবে ঘোষিত ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

  • মামলার কার্যক্রম স্থগিত: সুবিধা প্রদানের তারিখ হতে ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহক সোলেনামার মাধ্যমে চলমান মামলার কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
  • সুবিধা বাতিল: কোনো গ্রাহক প্রদত্ত সুবিধার কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে তার অনুকূলে প্রদত্ত সকল সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং ব্যাংক ঋণ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
  • CIB-তে রিপোর্ট: এই সুবিধা প্রাপ্ত ঋণসমূহ (বিশেষ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন এবং এক্সিট) সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত না হওয়া পর্যন্ত CIB-তে যথাক্রমে Special RSDL, Special RSTR, এবং Special Exit হিসেবে রিপোর্ট করতে হবে।
  • পরিচালক সংশ্লিষ্ট ঋণ: কোনো ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক এবং তার পরিবারের সদস্যবর্গ বা পরিচালকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত ঋণের বিপরীতে নীতি সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।
  • ইসলামী ব্যাংক: ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকসমূহ তাদের বিনিয়োগের বিপরীতে এই নীতি সহায়তা প্রদান করতে পারবে।
  • ত্রৈমাসিক রিপোর্ট: এই নীতি সহায়তা সংক্রান্ত তথ্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বিবরণী আকারে (সংযোজনী-‘ক’ মোতাবেক) প্রতি ত্রৈমাসিক শেষে পরবর্তী মাসের ১৫ (পনেরো) তারিখের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (Division-1) এর নিকট দাখিল করতে হবে।

যা বলছেন ব্যাংকাররা 

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “এটা বেশ বড় একটি সুবিধা দেওয়া হলো। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হতে পারে। তবে এ ঋণের টাকা ফেরত আসবে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।”

তিনি আরও বলেন, “দুই বছর পর্যন্ত গ্রেস পিরিয়ড থাকবে। এই সময়ে কী ঘটবে তা জানা নেই। দুই বছর পর গ্রাহক টাকা পরিশোধ না করলে তখন কী হবে? গ্রাহকদের সত্যিই টাকা ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা আছে কিনা তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।”

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, “বাস্তবে অনেক কিছুই ঘটছে। অনেক ব্যবসায়ী প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, আবার রাজনৈতিক কারণে অনেকেই ব্যবসা চালাতে পারেননি। এসব কারখানা সচল করতে হবে। তাদের সুযোগ দেওয়া হলে ক্ষতি নেই। ব্যবসা বন্ধ হলে মানুষের কর্মসংস্থানও বন্ধ হয়। তাই এ ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।”

শেষ কথা

সার্বিকভাবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নতুন ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালাটি একটি সাহসী এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটি একদিকে যেমন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু সম্ভাবনাময় ব্যবসাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার একটি নমনীয় সুযোগ তৈরি করেছে, তেমনই ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের নিবৃত্ত রেখে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টাও করেছে।

এই নীতিমালার নমনীয়তা কি অর্থনীতির জন্য সঞ্জীবনী হবে, নাকি ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের জন্য নতুন কোনো ফাঁক তৈরি করবে—এর উত্তর সময়ই বলে দেবে।

Leave a comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।